শিশু শিক্ষা
দীনি ও শিশুশিক্ষার এক সহজ পথ নূরানী শিক্ষা পদ্ধতি।
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে কুরআন মাজিদ শিখে এবং শেখায়!’ অমীয় এই বাণীকে সামনে রেখে শায়খুল কুরআন রহ. এদেশে শুরু করেন কুরআনের শুদ্ধ চর্চা। ইচ্ছে ছিল, কুরআনপ্রেমী প্রজন্ম গড়ার। শিশুদের হৃদয়ে ইসলামের সঠিক শিক্ষা গেঁথে দেওয়ার। এই দেশে দীনি শিক্ষা বিস্তার ও নিরক্ষরতা দূরীকরণে শায়খুল কুরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হুসাইন রহ.-এর অবদান অনন্য বরং সামগ্রিক বিচারে অতুলনীয়।
তাঁর আবিষ্কৃত নূরানী শিক্ষা পদ্ধতির সেরা বৈশিষ্ট্য হলো দীনি ও আধুনিক শিক্ষার সহজতম সমন্বয়। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা মাত্র তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে একজন নয়-দশ বছরের শিশুকে ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তোলেন।
একঃ তাজবিদসহ পূর্ণ বিশুদ্ধরূপে পুরো কুরআন পড়িয়ে দেওয়া হয়।
দুইঃ কণ্ঠস্থ করিয়ে দেওয়া হয় ফজিলতের কতিপয় সুরা।
তিনঃ প্রয়োজনীয় মাসয়ালাসহ পূর্ণাঙ্গ নামাজ এমনভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয়- ওই শিশু যেকোনো স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামত করতে পারে।
চারঃ জুমার নামাজ পড়ানোর মতো প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা দেওয়া হয়।
পাঁচঃ ঈদের নামাজ পড়ানোর মতো প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা দেওয়া হয়।
ছয়ঃ জানাজার নামাজ পড়ানোর মতো প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা দেওয়া হয়। এই পৃথিবীতে মানুষের কাছে মানুষের শেষ অধিকার ‘জানাজা’। জানাজা অর্থ দোয়া ও প্রার্থনা। আমরা জানি, এই নামাজের বিশেষ নিয়ম ও দোয়া আছে। এও জানি, বিদ্বান ও অবিদ্বান নির্বিশেষে এই সমাজের অধিকাংশ মানুষ- এমনকি নামাজিদেরও বিরাট অংশ যথানিয়মে জানাজা পড়তে জানেন না!
আর যদি বিষয়টা এভাবে দেখি- একজন বাবা। বিপুল অর্থ ব্যয় করে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন বাবা। তার জন্য শেষ প্রার্থনার আয়োজন ‘জানাজায়’ ছেলে নীরব। কারণ সে বাবার জন্যে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও মুক্তির যে দোয়া ও প্রার্থনা আছে- তা জানে না! বাবার জন্যে ইমামের আসনে দাঁড়িয়ে যিনি ওই মোনাজাত পাঠ করছেন তিনি এই বাবা-ছেলের কেউ নন। এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে! তাই নূরানী শিক্ষা পদ্ধতি একজন শিশুকে প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা দেয় কীভাবে তার প্রিয়জনকে শ্রদ্ধাভরে শেষ বিদায় জানাবে।
সাতঃ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো মুখস্ত করিয়ে দেওয়া হয়।
আটঃ জীবনপথের অব্যর্থ দিশারী স্বরূপ প্রিয়তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চল্লিশটি হাদিস তরজমাসহ মুখস্থ করিয়ে দেওয়া হয়।
নয়ঃ সরাসরি তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে একজন খাঁটি-পূর্ণাঙ্গ মুমিনজীবনে অভ্যস্ত করে তোলা হয় এই তিন বছরের বরাবর অনুশীলনে। সেই সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা অংক ইংরেজি ভূগোল- এমনভাবে পাঠদান করা হয়- এই কোর্স শেষ করার পর সহজেই স্কুলে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে।
দশঃ পাঠদান পদ্ধতি যূথবদ্ধ হওয়ার কারণে সঠিক ও স্পষ্ট উচ্চারণে শিশুরা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে- যা পরবর্তী জীবনে স্পষ্ট ভাষায় মনের ভাব প্রকাশে সাহায্য করে।
এগারঃ হাতের লেখা। এটা নূরানী পদ্ধতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। একইসঙ্গে সাত-আট বছরের একজন শিশু-
ক. আরবি বাংলা অংক ইংরেজির মনোহর হাতের লেখায় সিদ্ধ হয়ে ওঠে।
খ. বলা ও লেখায় সমান অনুশীলনের ফলে হাতের লেখা বলার মতোই শুদ্ধ ও দ্রুত গতিশীল হয়ে ওঠে।
গ. ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন- এমনকি কর্মজীবনেও বোর্ড ও খাতার পিঠে করা এই নিয়মিত অনুশীলন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সফল জীবন নির্মাণে সাহায্য করে। সাহায্য করে প্রতিযোগিতাপূর্ণ শিক্ষাজীবনে অনন্য ফলাফল অর্জনে।
নূরানীর তিন বছরের এই কোর্স শেষে কেউ চাইলে এবং প্রখর মেধা শক্তি থাকলে প্রবেশ করতে পারে হিফজুল কুরআনের পবিত্র আসরে এবং নাম লেখাতে পারে চির সৌভাগ্যের খাতায়। এভাবে শিক্ষার ধারাবাহিকতায় নিজেকে গড়ে তুলতে পারে একজন যুগ সচেতন আলেমে দীন হিসেবে। অথবা চাইলে কেউ সাধারণ শিক্ষায়ও যেতে পারে।